নুরুজ্জামান সরকার, জেলা প্রতিনিধি : ভারতের ভয়াবহ বন্যার প্রভাব পড়েছে দেশের তিস্তা নদীতে। আকর্ষিক পানির তোড়ে তিস্তা প্রবেশদ্বার নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার কালিগঞ্জ জিরো পয়েন্টে তিস্তার ডাঁনতীরে গ্রোয়েন ও পাউবো’র গাইড বাঁধের সংযোগ সড়ক যৌথবাঁধটি ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে।
বাঁধটির প্রায় ৫০০মিটার ভেঙ্গে তিস্তার পানি পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের কালিগঞ্জ ও পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের ঝাড়শিংহেরশ্বর গ্রামে প্রবাহিত হওয়ায় প্রায় দুই সহ¯্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে করে তিস্তা অববাহিকা নিম্নাঞ্চলগুলি প্লাবিত হয়েছে। পরিবারগুলি অসহায় হয়ে পড়েছে। খাবার পানি ও খাদ্য সংকটে পড়ে নিদারুন কষ্টে রয়েছে তারা।
তিস্তা ব্যারেজের উজানে প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় ৫টি ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের প্রায় ১০ সহ¯্রাধিক পরিবার তিস্তার পানিতে প্লাবিত হয়ে পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। ২০ অক্টোবর ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের কালিগঞ্জ,পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের ঝাড়শিংহেরশ্বর, খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের কিসামতেরচর, ফকোতেরচর ও
দোহলপাড়া,টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের উত্তর খড়িবাড়ী,চরখড়িবাড়ী, একতার বাজার, টাপুরচর,
দক্ষিন খড়িবাড়ী,গয়াবাড়ী ইউয়িনের পূর্ব গয়াবাড়ী, খালিমাচাপানী ইউনিয়নের ছোটকাতা ও বাইশপুকুর গ্রামে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় তিস্তার নিম্নাঞ্চলগুলি বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে করে তিস্তা নদী বেষ্টিত এলাকাগুলি তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। বুধবার সকাল থেকেই ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎ সীমার (৫২.৬০) ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে (৬০.১০) প্রবাহিত হয়।
যা সকাল ৮.৩০ মি. আরও ১৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। ফলে তড়িঘড়ি করে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড তিস্তা বেষ্টিত এলাকাগুলিতে রেড এলার্ট (লাল সংকেত) জারি করে । মানুষজনকে দ্রুত নিরাপদে স্থানে সরে যাওয়ার জন্য ঘোষণা করেন। তিস্তা ব্যারেজরে উজানে তিস্তার তীব্র স্রোতে নদীর দুই ধারের সকল ফসলি জমি ডুবে রয়েছে।
তীব্র ¯্রােতের তোড়ে গরু-ছাগল, হাস-মুরগীসহ নানা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র ভেঁসে গেছে বলেও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে। তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রেখেও তিস্তার পানি সামাল দিতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলে জানিয়ে ডালিয়া বন্যা পূর্বাবাস নিয়ন্ত্রন কক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা। এদিকে তিস্তা পানি দ্রত বের হতে না পেরে
ব্যারাজ এর পূর্বপার্শ্বে ডালিয়া হাতিবান্ধা সড়কে অবস্থিত ফ্লাড বাইপাস সড়ক (ফ্লাড ফিউজ) বাঁধটি বাঙ্গনের কবলে পড়ে তিস্তার পানির পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ সময় বাঁধটি বিধ্বস্ত হয়েছে। যারর কারনে তিস্তা ব্যারাজের সঙ্গে লালমনিরহাট জেলার বুড়িমারী, পাটগ্রাম ও হাতিবান্ধার সঙ্গে নীলফামারী জেলার সড়ক পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তিস্তার এ আকর্ষিক তিস্তার ভয়াবহ বন্যায় এলাকার হাজার হাজার পরিবার ঘরবাড়ি ছেরে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
কার্তিক মাসে তিস্তা নদীতে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি এলাকাবাসী ১৯৬৮ সালে একবার দেখেছিল। দীর্ঘ ৬২ বছর পর ফের তিস্তায় এমন বন্যা দেখে তিস্তা পাড়ের প্রবীণ ব্যক্তি হাতেম আলী (৮৮) এ কথা জানান। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পানি পরিমাপক নুরুল ইসলাম জানান, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তিস্তার পানি বিপৎসীমার অনেক নিচে প্রবাহিত হচ্ছিল।
সেই পানি ১২ ঘণ্টায় ১০৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। যা সকাল ৯টায় আরও ১০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পায়। সুত্র ধরে ভারতের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে তিস্তা নদীর পানি ভয়ানক ভাবে বেড়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত পাহাড়ি ঢলে তিস্তাার পানি দো-মহনী পয়েন্টে বুধবার সকাল ৬টায় বিপৎসীমার (৮৫.৯৬) ৬৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে (৮৬.৬৩) প্রবাহিত হচ্ছে।
সেই পানি সকাল ৭ টায় আরও ২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুর দুয়ার এলাকা তলিয়ে গেছে। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান জানান, এলাকার জিরো পয়েন্টে তিস্তার ডাঁন তীর ও গ্রোয়েন বাঁধটি হুমকির মুখে পড়ে ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। ওই গ্রোয়েনটি যৌধবাঁটি বিধবস্ত হয়ে এলাকার দুই সহ¯্রাধিক বাড়ি তিস্তা নদীতে কন্যায় পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। অন্তত ৫০ টি পরিনবারের বাড়ীঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
১০ টি পরিবারের বাড়ীঘর পানির ¯্রােতে ভেঁসে গেছে। খালিশা চাঁপানী ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, কার্তিক মাসের এমন আকির্ষিক বন্যা পানিবন্দি পরিবারগুলিকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। এলাকার ছোটখাতা,বাইশপুকুর, সুপারীপাড়া গ্রামগুলি এখন নদীতে পরিণত হয়েছে। তাছাড়াও হঠাৎ তিস্তায় পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলের সবজিসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফসল ইতিমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী পরিবারগুলো শিশু সন্তান, বৃদ্ধ ও গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন বলেও জানা গেছে।
এদিকে টেপাখড়িবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হক জানিয়েছেন, বন্যা পরিস্থিতিতে খুব খারাপ অবস্থায় পড়েছে পরিবারগুলি । তিস্তা বাজার, তেলির বাজার সংলগ্ন স্বপন বাধটি ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। এতে করে পাঁচ শতাধিক পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। খগাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন জানিয়েছেন, দোহলপাড়া, কিসামতের এলাকা তিস্তার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়া এলাকাগুলির ফসলের ক্ষেত সব পানির নিচে পগে রয়েছে।
ঘরবাড়ি ছেড়ে মানুষজন গবাদি পশুসহ নিরাপদে সরে গেছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশফাউদ্দৌলা প্রিন্স জানিয়েছেন, উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পরিস্থিতি ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রেখেও পানি সামাল দেয়া যাচ্ছে না। আমরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজখবর রাখছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের সব রকম ব্যাবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড ফিউজ বিধবস্ত হওয়ায় আমরা তিস্তা অববাহিকায় রেড এলার্ট জারি করে মানুষজনকে নি
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।